Uncategorized

Honda Grace রিভিউ

আজকের রিভিউ স্টার হোন্ডা গ্রেস। ২০-২৪ লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে যারা গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন, বিশেষ করে যারা সেলফ ড্রাইভ করে থাকেন তাদের জন্য এই গাড়ি একটা বেটার অপশন। হোন্ডা গ্রেস হলো চার দরজার, পাঁচ সিটের একটা সেডান গাড়ি। গ্রেস এর আরেকটি নাম আছে। যা হলো হোন্ডা সিটি। তবে, জেডিএম ভার্সনগুলো গ্রেস নামে আসে। গ্রেস হাইব্রিড এবং ননহাইব্রিড দুইররকম ভ্যারিয়েন্ট এর হয়ে থাকে। হোন্ডা সিটি বা গ্রেস এর প্রোডাকশন শুরু হইছে ১৯৮০ সাল থেকে এবং বর্তমানে এর সপ্তম জেনারেশনের প্রোডাকশন চলছে। আজকের আলোচনা হোন্ডা গ্রেস এর ৬ষ্ঠ জেনারেশন এর হাইব্রিড ভার্সন সম্পর্কে।

এক্সটেরিয়রঃ

গ্রেসের এক্সটেরিয়র ডিজাইন স্পোর্টি। গ্রেস এর সাধারণত তিনটা প্যাকেজ আছে। ডিএক্স, এলএক্স, ইএক্স। এছাড়াও একটা স্পেশাল এডিশন এর ব্ল্যাক স্টাইল প্যাকেজ আছে। গ্রেস এর ডিজাইন এ হালকা ফোলানো ফেন্ডার এবং বিশেষ করে দুইসাইডে ডোর হ্যান্ডেল এর নিচে একটা লম্বা লাইন আছে টেইললাইট পর্যন্ত। যেইগুলা গাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বেশ  ভালো ভূমিকা রাখে। এছাড়াও গ্রেস এর দুইটা বডিকিট ভার্সন আছে। যেগুলো হলো মুগেন এবং মডুলা। গ্রেস এর হাইয়ার গ্রেড এর সাথে ১৬ ইঞ্চির এলয় রিমস আসে। যেইগুলা দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়। গ্রেস এর সাইড মিররগুলা একটু আনকমন, যেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়। ছাদে একটা স্টাইলিশ শার্ক ফিন এন্টেনা থাকে। গ্রেস এর থ্রিডি ডিজাইনড হেডলাইট এবং র‍্যাপড এরাউন্ড টেইল লাইটটা ও দেখতে বেশ স্টাইলিশ। ফগ লাইট তোহ আছেই। ইএক্স প্যাকেজ ও হাইয়ার প্যাকেজের সাথে হেডলাইটের ডূয়েল প্রোজেকশন, টেইললাইটে এলইডি লাইট, কি লেস এন্ট্রি, রিমোর্ট ব্যাক ডোর ওপেনার আসে। গ্রেস এর ফুয়েল ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি হচ্ছে ৪০ লিটার। পেছনের ট্রাঙ্ক স্পেসটাও বেশ বড়, যার আয়তন ৫৩৬ লিটার। এছাড়াও যদি বাড়তি স্পেস এর প্রয়োজন হয়, তাহলে পেছনের সিট ফোল্ড করে ট্রাঙ্ক স্পেস বাড়ানো যায়।

ইন্টেরিয়রঃ

গ্রেস এর ইন্টেরিয়র খুব একটা আকর্ষনীয় মনে হয় না আমার কাছে। মানে একটু সিম্পল টাইপ আরকি। তবে প্রয়োজনীয় সব ফিচার্সই আছে। স্টেয়ারিং লেদার র‍্যাপড এবং সাথে মাল্টিমিটিয়া কন্ট্রোল, ক্রুজ কন্ট্রোল, এমনকি প্যাডেল শিফটার ও আছে! প্যাডেল শিফটার দিয়ে স্পোর্টস মোড এ গাড়ি ম্যানুয়্যালি ড্রাইভ করা যায়। গ্রেস এর গেইজ ক্যাস্টারটা সুন্দর। হাইব্রিড গাড়ি, এইজন্য গেইজ ক্লাস্টারে নীল আলোর ছোঁয়া দেখা যায়। ড্যাশবোর্ড এবং দুইসাইডের ম্যাটারিয়াল, প্লাস্টিক এবং ফ্যাব্রিকের তৈরি। ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমটা ড্রাইভার ফোকাসড। গ্রেস এর সাথে মোট আটটা স্পিকার আসে। যার সাউন্ড কোয়ালিটি এই বাজেটের গাড়ির তুলনায়  বেশ ভালো। এছাড়াও টেম্পারেচার কন্ট্রোল, এমনকি সিট হিটার অপশন ও থাকে গ্রেস এর সাথে। মাঝখানের কন্ট্রোলগুলো টাচ। সামনে ও পেছনের আর্মরেস্ট এ দুইটা করে মোট চারটা বোটল হোল্ডার আছে। সবচেয়ে বড় এডভান্টেজ হচ্ছে, হোন্ডা গ্রেস এর পেছনের দিকেও দুইটা এসি ভেন্ট আছে। যা এই বাজেটের কোনও গাড়িতে নাই এমনকি এর চেয়ে দামী অনেক গাড়িতেও থাকে না। গ্রেস এর সাথে মোট আটটা এয়ার ব্যাগ থাকে। গ্রেস এর এলএক্স ও ইএক্স প্যাকেজ এ হোন্ডা-সেন্সিং প্রযুক্তি থাকে। হোন্ডা-সেন্সিং হচ্ছে হোন্ডার সেফটি সিস্টেম, যেটা টয়োটার সিটি ট্রাফিক ব্রেক এসিস্ট এর  মতোই কাজ করে। ক্যামেরা এবং চারিদিকে বসানো রাডার ও সেন্সরের মাধ্যমে ডিটেক্ট করে অ্যাক্সিডেন্ট এড়াতে বা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে গাড়ি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। অর্থাৎ সামনে বড় কিছু আসলে গাড়ি নিজ থেকে ব্রেক করে থেমে যাবে। এছাড়াও এই গাড়িতে লেন ডিপারচার ও লেন-কিপ অ্যাসিস্ট এবং ট্রাকশন কন্ট্রোল আছে। লেইন ডিপার্চার মানে হলো, গাড়ি যদি রাস্তার লেইনের বাইরে চলে যায়, তাহলে গাড়ির স্টিয়ারিং নিজে থেকে ঘুরিয়ে লেন মেইনটেইন করাবে। ট্রাকশন কন্ট্রোল বৃষ্টির সময় বেশ কাজে দেয়। অটো হাই-বীম, অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল তো থাকছেই।

ইঞ্জিনঃ হোন্ডা গ্রেস এর সাথে ১.৫ লিটার এর ভি-টেক ইঞ্জিন আসে, যার সাথে একটি হাই পার্ফর্মেন্স ইলেক্ট্রিক মোটর ও আছে। যার টোটাল আউটপুট ১৩৭ হর্সপাওয়ার। ১০৯ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন থেকে আসে এবং বাকিটা ব্যাটারি থেকে। এই ইঞ্জিন টয়োটা প্রিয়াস বা সিএইচআর এর ১.৮ লিটার  ইঞ্জিনের সমান কম্বাইন্ড আউটপুট ডেলিভার করে। গ্রেস 2WD ও 4WD ২টি কনফিগারেশনেই অ্যাভাইলেবল। ৭-স্পিড ডুয়েল ক্লাচ ট্রান্সমিশন (ডিসিটি)-এর জন্য চাকায় পাওয়ার ডেলিভারি আরও স্মুথ হয় এবং পাওয়ার লস হওয়ার সম্ভাবন থাকে না।  যার কারণে গাড়িটির অ্যাক্সেলারেশন খুবই চমৎকার। গাড়িতে স্পোর্টস মোড আছে। বেশি গতির প্রয়োজন হলে স্পোর্টস মোড ব্যববহার করার ও সুযোগ থাকছে। এছাড়াও গাড়িতিতে তিনটি মোড এ ড্রাইভ করার সুযোগ আছে। যেগুলো হলো,EV drive, Hybrid drive, Engine drive মোড। এছাড়াও গ্রেস এ রয়েছে Electric servo brake system প্রযুক্তি। যার কারণে এই গাড়ির ব্রেকিং সিস্টেম অনেক স্মুথ। হোন্ডা গ্রেস এর মাইলেজ অসাধারণ। কোম্পানীর দাবি অনুযায়ী প্রতি লিটারে মাইলেজ ৩৪ কিমি পাওয়া যায়। যদিও বাংলাদেশে বা বিশেষ করে ঢাকা শহরে জ্যাম, রাস্তার খারাপ কন্ডিশনের কারণে এতো বেশি মাইলেজ্ পাওয়া যায় না।  তবে একটু যত্নে এবং নিয়মানুযায়ী  ড্রাইভ করলে অনায়াসেই সিটিতে লিটারে +-২০-২২ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে +-৩০ কিলোমিটার মাইলেজ পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশে গ্রেস এর কম্পিটিটর হিসেবে টয়োটা এক্সিওকে তুলনা করা হয়। তবে তুলনামূলকভাবে গ্রেস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক্সিও থেকে এগিয়ে থাকবে। বিশেষ করে পার্ফর্মেন্স, ফিচার্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে এতো সুবিধা থাকার পর ও গ্রেস এ বেশ কিছু অসুবিধা ও আছে। যেইগুলো হলো, গাড়ির গিয়ার বক্স। বাংলাদেশে ২০১৪/১৫ মডেলের বেশ কিছু মডেলের গ্রেস এর গিয়ারবক্স ফেইলড এর রেকর্ড আছে। যেহেতু ডিসিটি গিয়ার বক্স, বাংলাদেশে সহজে পাওয়া ও যায় না। আর একবার গিয়ারবক্স ফেইল্ড করলে, প্রায় ৫-৭ লাখ টাকার ধাক্কা। যদিও ২০১৬ মডেল থেকে আর কোনও গিয়ারবক্স ফেইলড এর রেকর্ড শোনা যায় নাই। এরবাইরেও গ্রেস এ একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার ইউনিট আছে, যেটা একবার নষ্ট হইলে ২-৩ লাখ টাকা চলে যায় ঠিক করাইতে। তবে কম মাইলেজের গ্রেস কিনলে আর নিয়মমাফিক ড্রাইভ করলে এইসবের ভয় থাকে না। গ্রেস এর সাথে আটবছরের অথবা ২ লাখ কিলোমিটার পর্যন্ত কোম্পানী থেকে ব্যাটারি ওয়ারেনন্টি থাকে। যদিও রিকন্ডিশন কিনলে ওয়ারেন্টি পাওয়ার সুযোগ নাই। তারপর ও একটু মেইন্টেইন করে চালাইলে হাইব্রিড ব্যাটারি থেকে লং লাস্টিং পার্ফমেন্স পাওয়া যাবে নিশ্চিন্তে। তবে রিসেল ভ্যালু চিন্তা করলে, বাংলাদেশে গ্রেস এর রিসেল ভ্যালু খুব বেশি নাই। এই দিক থেকে এক্সিও গ্রেস থেকে এগিয়ে থাকবে। তবে যারা সেলফ ড্রাইভের জন্য একটু আনকমন, বেশি ইঞ্জিন পারফর্মেন্স, বেশি আধুনিক ফিচার্সযুক্ত জেডিএম গাড়ি চাচ্ছেন, তাদের জন্য গ্রেস হতে পারে একটা বেস্ট অপশন।

Leave a Reply