Uncategorized

গাড়ি কত প্রকার, কী কী?

ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা চার চাকার যানবাহনে রয়েছে নানারকম প্রকারভেদ। দেখতে কাছাকাছি হলেও ব্যবহার এবং ডিজাইন অনুসারে এই গাড়িগু‌লোর বডিশেইপ অনুযায়ী নানা ধরনের নাম হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক গাড়ির কিছু প্রকারভেদ সম্পর্কে।

◾সেডানঃ

রাস্তায় চলাচল করা ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গাড়ি হলো সেডান কার। সেডান কার সাধারণত সেই সব গাড়িকে বলা হয়, যেসব গাড়িতে চারটি দরজা থাকে, বসার জন্য দুই সারি আসন থাকে, ইঞ্জিন সামনে থাকে এবং মালামাল বহন করার জন্য গাড়ির পেছনের অংশে আলাদা জায়গা থাকে। এসব গাড়িতে পেছনের গ্লাসটি সিটের কাছাকাছি মিলিত হয় এবং মালামাল বহন করার অংশটি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে। আর ভেতর থেকে পেছনের ট্রাংক স্পেস এ কিছু রাখার ব্যবস্থা থাকে না। ১৯১২ সালে প্রথম এই শব্দ গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ‘সেডান’ এর অপর নাম হলো ‘সেলুন’।  বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় এই সেডান গাড়ি এবং বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যায় সেডান সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। আমাদের দেশের কিছু জনপ্রিয় সেডান গাড়িগুলো হলো,  টয়োটা প্রিমিও, এলিয়ন, অ্যাক্সিও, মিতসুবিশি ল্যান্সার, মাজদা এক্সেলা, হোন্ডা গ্রেস, সিভিক, অ্যাকর্ড, হুন্দাই সোনাটা এবং নিশান ব্লুবার্ড উল্লেখযোগ্য।

◾হ্যাচব্যাক

সেডান গাড়ির সঙ্গে এই ধরনের গাড়ির পার্থক্য হলো, এই গাড়িতে বুট স্পেসের জন্য আলাদা কোনো স্থান থাকে না। আসনের পর থেকেই এর বুট স্পেস শুরু হয়। গাড়ির পেছনের গ্লাস বা দরজা খুলে সরাসরি বুট স্পেস দেখা যায়। হ্যাচব্যাক গাড়িগুলোকে  সিটি কার ও বলা হয়ে থাকে। ছোট ফ্যামিলি এবং শহরের রাস্তায় চলাফেরা করার জন্য এই গাড়িগুলো পার্ফেক্ট। এছাড়াও হ্যাচব্যাক গাড়িগুলোতে টার্নিং রেডিয়াস অনেক ভালো হয় এবং ছোট গাড়ি হওয়ায় পার্ক করতে সুবিধা অনেক। আমাদের দেশের জনপ্রিয় কিছু হ্যাচব্যাক গাড়িগুলো হলো- টয়োটা আইএসটি, ভিটজ, একুয়া, হোন্ডা ফিট, এমজি থ্রি, মাজদা এক্সেলা হ্যাচব্যাক, সুজুকি অ্যাল্টো ইত্যাদি।

◾স্টেশনওয়াগনঃ

স্টেশন ওয়াগন অনেকটাই সেডান গাড়ির মতো দেখতে। শুধুমাত্র পেছনের সাইডে পার্থক্য থাকে। স্টেশন ওয়াগন গাড়িগুলোর পেছনে মালামাল রাখার স্পেস অনেক বেশি থাকে, পেছনের সিটের হেডরুম বেশি থাকে।  অনেক মালামাল বহন করা যায় স্টেশন ওয়াগন গাড়িগুলোতে। বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় স্টেশন ওয়াগন গাড়ি হলো, টয়োটা ফিল্ডার, টয়োটা প্রোবক্স ইত্যাদি।

◾ক্রসওভার

ক্রসওভার গাড়িগুলো ঠিক সেডান নয়, আবার আকারে এসইউভির সমানও নয় এমন মাঝামাঝি ধরনের গাড়িগুলোকে ক্রসওভার বলে। এককথায় বলা যায়, কম্পেক্ট সাইজের একটা এসইউভি শেইপ। এসব গাড়ি সাধারণত সেডান গাড়ির চেয়ে উঁচু আবার এসইউভি গাড়ির তুলনায় নিচু হয়। ক্রসওভার গাড়িগুলোতে চাকার সাইজ সেডান গাড়ির তুলনায় বড় থাকে। গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এসইউভির মতো হয় না, তবে কিছুটা সেডান গাড়ির মতো বা একটু বেশি থাকে। হ্যাচব্যাক গাড়িগুলোর সঙ্গেও এই গাড়িগুলোর কিছুটা মিল রয়েছে। অর্থাৎ হ্যাচব্যাক এর বড় ভার্সন হলো ক্রসওভার, আর ক্রসওভার এর বড়ভার্সন হলো এসইউভি। টয়োটা সিএইচআর, হোন্ডা ভেজেল, মিতশুবিশি ইকলিপস ক্রস, হুন্দাই টিউসন, এমজি জিএস, হাভাল জলিয়ন, ডিএফএসকে গ্লোরি সহ বেশ কয়েকটি মডেলের ক্রসওভার দেশের গাড়ির বাজারে জনপ্রিয়। 

◾এসইউভি

‘স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল’ এর  সংক্ষিপ্ত রুপ হলো এসইউভি। আমাদের দেশে এই গাড়িগুলো ‘জিপ গাড়ি’ বলেই পরিচিত। যদিও জিপ হলো একটি যুক্তরাষ্ট্রের অটোমোবাইল কোম্পানির নাম। এসব গাড়ির হুইল বেইস বড় হয়ে থাকে এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সও অনেক বেশি থাকে। মূলত এই গাড়িগুলোর ডিজাইন করা হয়, পাহাড়ি, মরুভূমির রাস্তা অথবা অফরোডিং করার জন্য। এসইউভির কিছু কিছু মডেল সাত আসনবিশিষ্ট ও হয়ে থাকে এবং গাড়িগুলোয় চড়তে বেশ আরামদায়ক। বাংলাদেশের ভাঙাচূড়া রাস্তা এই গাড়িতে বসে অনুভবই করতে পারবেন না। তবে এই গাড়িগুলো যেইউদ্দেশ্যে বানানো, বাংলাদেশে সেই কাজে ব্যবহার করার সুযোগ খুব বেশি হয়ে ওঠে না। কারণ বাংলাদেশে মরুভূমি নাই, পাহাড়ি অফরোডিং রাস্তাও খুব বেশি নাই। তাও অনেকেই আরামের ভ্রমণ এবং সোশ্যাল স্ট্যাটাস এর জন্য এই গাড়িগুলো কিনে থাকেন। দূরের পথে উঁচু আসনে বসে নিরাপদ যাত্রার জন্য গাড়িগুলো সারা পৃথিবীতেই বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় এসইউভি গাড়ই হলো- টয়োটা প্রাডো, হ্যারিয়ার, মিতশুবিশি পাজেরো, আউটল্যান্ডার, নিশান এক্স-ট্রেইল, হাভাল এইচসিক্স ইত্যাদি।

◾অফরোডার

পাহাড়ি রাস্তা, কর্দমাক্ত এবং পিচ্ছিল পথ অথবা অল্প পানিতেও যে গাড়ি দাপটের সঙ্গে পাড়ি দেয়, সেই সব গাড়িকে অফরোডার বলা হয়। অফরোডার গাড়ির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশাল আকৃতির মোটা চাকা। খাঁজকাটা এবং মাটি আঁকড়ে ধরার মতো চাকা থাকে এই গাড়িতে। তার সঙ্গে রয়েছে ফোর হুইল ড্রাইভ সিস্টেম। এতে চারটি চাকা সমান শক্তিতে গাড়িকে এগিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশে যদিও প্রোপার অফরোডিং এর ব্যবস্থা খুব বেশি নাই, তারপরও এই অফরোডার গাড়িগুলো আমাদের দেশের বিত্তবানদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ভিএইট, ল্যান্ড রোভার, নিশান পেট্রোল এই ক্যাটাগরির অন্যতম গাড়ি।

◾মিনিভ্যান

শুনতে ছোট শোনালেও এসব গাড়ি আসলে অত ছোট নয়। আমাদের দেশে অনেকেই এই গাড়িগুলোকে মাইক্রো বলে থাকে। এ ধরনের গাড়ি যাত্রীর পাশাপাশি মালামালও বহন করতে পারে। অধিক সদস্যের পরিবার বা বেশি যাত্রী বহন করার জন্য এ ধরনের গাড়ি জনপ্রিয়। টয়োটা নোয়া, ভক্সি, ইস্কয়ার, আলফার্ড,  মিনিভ্যান হিসেবে পরিচিত।

◾এমপিভি

পাঁচজনের বেশি যাত্রী বহন করা যায় এবং দেখতে অনেকটা হ্যাচবেক ধরনের গাড়িগুলোকে এমপিভি গাড়ি বলে। এমপিভি এর পূর্ণরুপ হলো, “মাল্টিপারপাস ভেহিক্যাল।” এই গাড়িগুলোর অন্যতম সুবিধা হলো এই গাড়িগুলোতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সারিতে আসন থাকে এবং গাড়িতে সবমিলিয়ে ৭-৮ জন বসতে পারে। এছাড়াও এই গাড়ির পেছনের আসনগুলোকে ভাঁজ করে রেখে মালামাল বহন করার জন্যও ব্যবহার করা যায়। সুজুকি আর্টিগা, মিতশুবিশি এক্সপেন্ডার, টয়োটা এভাঞ্জা, প্রিয়াস আলফা, সিয়েন্টাসহ বেশ কয়েকটি মডেলের গাড়ি দেশের বাজারে পাওয়া যায়।

◾কমার্শিয়াল

যেসব গাড়ি শুধু বেশি যাত্রী বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেই সব গাড়ি কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিক গাড়ি হিসেবে পরিচিত। ১০ থেকে ১২ জন পর্যন্ত যাত্রী এই গাড়িতে বহন করা যায়। এই গাড়িগুলো মিনিভ্যান ধরনের গাড়ির বড়ভার্সন এবং মিনিভ্যান এর চেয়ে বেশ লম্বা হয়ে থাকে। গাড়ির ইঞ্জিন রাখার জায়গা বেশ ছোট হয়। কর্পোরেট জগৎ, রেন্টে কার হিসেবে, অনেকজন একসাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এ ধরনের গাড়ি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। টয়োটা হাইয়েস, হুন্দাই এচইওয়ান, নিশান ক্যারাভ্যান এই ক্যাটাগরির গাড়িতে অন্যতম।

◾স্পোর্টস

সেডান গাড়ির মতো কিছুটা দেখতে হলেও স্পোর্টস কার একটু নিচু ধরনের হয়ে থাকে। অর্থাৎ গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকে। স্পোর্টস কারের চাকাগুলোর সঙ্গে গাড়ির শরীর প্রায় লেগে থাকে। গাড়ির পেছনে বুটের ওপরে স্পয়লার লাগানো থাকে। বাতাসকে কাটিয়ে গতি তুলতে সাহায্য করে গাড়িকে মাটির সঙ্গে সেঁটে ধরতে স্পয়লার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত স্পোর্টস কার দুই দরজাবিশিষ্ট হয়ে থাকে।  টয়োটা ৮৬, সেলিকা, মাজদা আরএক্স সেভেন, আরেক্স এইট, নিতিসুবিশি ইভোলিউশন সহ বেশ কয়েকটি মডেলের স্পোর্টস গাড়ির দেখা মেলে আমাদের দেশে।

◾কনভার্টিবল

গাড়ি বলতেই  আমরা সাধারণত নির্দিষ্ট ছাদের একটি যানবাহনকে বুঝি। কিন্তু গাড়ি যদি এমন হয়, চাইলেই মাথার ওপর আকাশ দেখা বা খোলামেলা চালানোর সুযোগ থাকে। যেখানে মাঝখানে কোনো বাধা থাকবে না। এ ধরনের গাড়িগুলোকে কনভার্টিবল গাড়ি বলে। এতে ছাদটিকে ফোল্ড করে গাড়ির পেছনের অংশে স্তূপ করে রাখা যায়। বৃষ্টি বা অধিক গরমে ফোল্ডেবল ছাদটি দিয়ে গাড়ি ঢেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালানোর সুযোগ এ গাড়িতে মেলে। প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে কিংবা একা একা ড্রাইভিং উপভোগ করার জন্য এই গাড়িগুলো পার্ফেক্ট। মাজদা এমএক্স ফাইভ, টয়োটা এমআরএস, হোন্ডা এস৬৬০, ডাইহাতসু কোপেন সহ এই ক্যাটাগরিতে বেশ কয়েকটি গাড়ি বাংলাদেশে দেখা মেলে।

Leave a Reply